You are currently viewing ইতালি-আলবেনিয়া অভিবাসী চুক্তি কি ব্যর্থতার মুখে?
italia-albenia-MigrantsGuide

ইতালি-আলবেনিয়া অভিবাসী চুক্তি কি ব্যর্থতার মুখে?

ইতালি-আলবেনিয়া অভিবাসন চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আলবেনিয়ার সংসদ এই চুক্তি অনুমোদন করার এক বছর পেরিয়ে গেলেও শেনজিন ও গজাদারে ইতালির নির্মিত অভিবাসী আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এখনো সম্পূর্ণ ফাঁকা পড়ে আছে। চুক্তির লক্ষ্য ছিল অনিয়মিত অভিবাসীদের আটক ও তাদের আশ্রয় আবেদন পর্যালোচনা করা, কিন্তু আইনি চ্যালেঞ্জ ও রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে এর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ইতালি ও আলবেনিয়া এই চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আলবেনিয়ার সংসদ অনুমোদন দেয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইতালি প্রতিবছর ৩৬,০০০ অনিয়মিত অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীকে আলবেনিয়ায় নির্মিত কেন্দ্রগুলিতে স্থানান্তর করবে এবং সেখানেই তাদের আশ্রয় আবেদন পর্যালোচনা করা হবে।

আইনি বাধার মুখে ইতালির সরকার

ইতালির সরকার অভিবাসী স্থানান্তর শুরু করলেও তা নানা আইনি ও রাজনৈতিক বাধার সম্মুখীন হয়েছে।

  • ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর, প্রথম দফায় ১৬ জন অভিবাসীকে জাহাজে করে আলবেনিয়ায় পাঠানো হয়। কিন্তু রোমের একটি আদালত এই স্থানান্তরকে বেআইনি ঘোষণা করে এবং রায় দেয় যে, অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় পাঠানো হলে তা আন্তর্জাতিক সুরক্ষা আইনের লঙ্ঘন হবে। ফলে, তাদের সবাইকে পুনরায় ইতালিতে ফিরিয়ে আনা হয়।
  • ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর, আরও ৮ জনের একটি দলকে পাঠানো হয়।
  • ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি, তৃতীয় দফায় ৪৯ জনকে আলবেনিয়ায় পাঠানো হয়।

কিন্তু প্রতিবারই রোমের আপিল আদালত রায় দেয় যে, লুক্সেমবুর্গের ইউরোপীয় আদালত চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ না করা পর্যন্ত অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় রাখা যাবে না। ইউরোপীয় আদালতের এই রায় ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাশিত।

পর্যবেক্ষকদের সরে যাওয়া

অপরদিকে, ইতালির পর্যবেক্ষক কর্মকর্তারা ও এনজিও প্রতিনিধিরা “পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত” আলবেনিয়া ত্যাগ করেছেন।

অ্যাকশনএইড-এর অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেস্কো ফেরি ডিডাব্লিউ-কে জানান,

“তাভোলো আসিলো ই ইমিগ্রাৎসিওনে (ইতালির অভিবাসী অধিকার রক্ষাকারী সংগঠনগুলোর জাতীয় জোট) আলবেনিয়ার কেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল। বর্তমানে আমরা সেখানে নেই, তবে দূর থেকে নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজনে ফিরে যেতে প্রস্তুত।”

ভীত-সন্ত্রস্ত ও বিভ্রান্ত অভিবাসীরা

আলবেনিয়ায় পাঠানো ৭৩ জন অভিবাসী লিবিয়া থেকে ইতালি বা মাল্টায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। ফেরি জানান,

“তারা অত্যন্ত ভীত ছিলেন, কারণ তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন।”

তিনি আরও বলেন,

“আমরা এমন অভিবাসীদের দেখেছি, যারা ভয়, বিভ্রান্তি ও দিশেহীন অবস্থায় ছিলেন। তারা আশ্রয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতেন না এবং আবেদন করার জন্য প্রস্তুতও ছিলেন না। এই পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে দেখায় যে, আলবেনিয়া মডেল কীভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে অভিবাসীদের অধিকার লঙ্ঘন করছে।”

italia-albenia-MigrantsGuide

আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পুনঃব্যবহারের পরিকল্পনা, তবে বাধার সম্ভাবনা

ইনফোমাইগ্রেন্টস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইতালির মেলোনি সরকার আলবেনিয়ার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে “প্রত্যাবাসন সুবিধা”-তে রূপান্তর করার পরিকল্পনা করছে। তবে এটি নিয়েও বিতর্ক দেখা দিতে পারে।

ফ্রান্সেস্কো ফেরি এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করে বলেন,

“এটি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করা উচিত। কারণ, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি আরও বাড়াবে। কেন্দ্রগুলো বন্ধ করাই একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত।”

একটি ব্যর্থ প্রকল্প?

চুক্তি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ইতালির বিশেষজ্ঞ ও বিরোধী দলগুলো একে ব্যর্থ বলে মনে করছে।

ইতালির মধ্য-বামপন্থী ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-র নেত্রী এলি শ্লাইন চুক্তিটিকে “একটি বড় ব্যর্থতা” বলে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির পদত্যাগ দাবি করেছেন।

ফেরি তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন,

“খুবই অল্পসংখ্যক মানুষকে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং তাদের সবাইকে আবার ইতালিতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বেশিরভাগ সময় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ফাঁকা ছিল এবং প্রশাসনিক জটিলতা, আইনি চ্যালেঞ্জ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি চুক্তির বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে।”

চুক্তি বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মেলোনি

যদিও ইতালির সরকার এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি, প্রধানমন্ত্রী মেলোনি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন,

“আমরা প্রতিটি সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি আরও বলেন,

“ইতালির জনগণ তাদের সরকারকে অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে, কারণ এটি নিরাপত্তার ঝুঁকি সৃষ্টি করে।”

চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

চুক্তিটি শুরু থেকেই আলবেনিয়ার সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিতর্কের বিষয় ছিল। বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব আলবেনিয়া ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা ১১ মে সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলে, এই চুক্তি নবায়ন করবে না।

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বিষয় ও অভিবাসন কমিশনার ম্যাগনুস ব্রুনার সম্প্রতি ইতালি সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী মেলোনির সঙ্গে বৈঠক করেন এবং অভিবাসীদের প্রত্যাবাসন নীতির ওপর আলোচনা করেন।

তিনি ইতালীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান যে,

“ইউরোপীয় কমিশন অভিবাসী প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত নতুন আইনি কাঠামো নিয়ে আশাবাদী, যেখানে প্রত্যাবাসনের বাধ্যবাধকতা, নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি এবং আরও সমন্বিত ইউরোপীয় নীতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।”

তবে ফেরি এই পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন,

“ইউরোপীয় সরকারগুলো তৃতীয় দেশে অভিবাসী আশ্রয়ব্যবস্থা স্থানান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি আশ্রয়প্রার্থীদের সুরক্ষার ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে এবং আন্তর্জাতিক সুরক্ষার দায়িত্ব ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমার বাইরে সরিয়ে দেবে।”

এখন ইউরোপীয় আদালতের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে এই চুক্তির ভবিষ্যৎ, যা ইউরোপের অভিবাসন নীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

Leave a Reply