You are currently viewing ফ্রান্সের নতুন অভিবাসন নীতিতে কঠোর ভাষা পরীক্ষা, ফেল করছেন ফরাসিরাও

ফ্রান্সের নতুন অভিবাসন নীতিতে কঠোর ভাষা পরীক্ষা, ফেল করছেন ফরাসিরাও

ফ্রান্সে অভিবাসীদের জন্য নাগরিকত্ব বা দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের অনুমতির নতুন নিয়ম এতটাই কঠিন করা হয়েছে যে, এমনকি অনেক ফরাসি নাগরিকও এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারছেন না। নতুন অভিবাসন আইনের আওতায়, এখন থেকে ফরাসি ভাষার দক্ষতা প্রমাণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে প্রায় ৬০,০০০ অভিবাসী বসবাসের অনুমতি হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভাষা পরীক্ষায় কড়াকড়ি, ঝুঁকিতে হাজারো অভিবাসী

ফ্রান্সের নতুন অভিবাসন আইন অনুযায়ী, যারা দেশটিতে দীর্ঘমেয়াদে বসবাস বা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন, তাদের কঠোর ভাষা পরীক্ষায় পাস করতে হবে। এর আগে অভিবাসীদের শুধু একটি ‘ইন্টিগ্রেশন চুক্তি’ (Contrat d’Intégration) স্বাক্ষর করে ফরাসি শেখার প্রতিশ্রুতি দিলেই চলত। তবে নতুন নিয়মে অন্তত মাধ্যমিক স্কুলের (১১-১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের সমমান) ভাষাজ্ঞান অর্জন করতেই হবে। যারা আরও দীর্ঘমেয়াদী বসবাস বা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন, তাদের উচ্চতর ভাষাগত দক্ষতা দেখাতে হবে।

একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নিয়মের কারণে প্রথম বছরেই প্রায় ৩,৩০,০০০ অভিবাসীর ওপর এর প্রভাব পড়বে এবং তাদের মধ্যে ৬০,০০০ জন ভাষা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে বসবাসের অনুমতি হারাতে পারেন।

ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়ো বলেন, “যদি একজন ব্যক্তি ফ্রান্সে বহু বছর ধরে বসবাস করেন, অথচ এখনো ফরাসি ভাষা বলতে না পারেন, তাহলে এর অর্থ হলো তিনি ভাষা শেখার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেননি।” সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই নতুন আইন অভিবাসীদের আরও ভালোভাবে সংহত হতে সাহায্য করবে।

ফরাসিদের জন্যও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে পরীক্ষা

নতুন পরীক্ষার মান এতটাই কঠোর করা হয়েছে যে, অনেক ফরাসি নাগরিকও এতে পাস করতে পারছেন না। ফ্রান্সের গণমাধ্যম FranceInfo-এর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১০ জন ফরাসি স্বেচ্ছাসেবককে এই পরীক্ষা দিতে বলা হয়। তাদের মধ্যে পাঁচজন লিখিত পরীক্ষায় ফেল করেন, যদিও তারা মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে একজন ছিলেন একজন সাহিত্য শিক্ষার্থী, যিনি পাঁচ বছর ধরে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন, কিন্তু তিনিও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হন।

ভাষা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান Thot-এর ফেলিক্স গুইয়ন বলেন, “এই পরীক্ষা বেশিরভাগ অভিবাসীদের জন্য খুব কঠিন। তারা প্রতিদিন ফরাসি ভাষায় কাজ করেন, কথা বলেন, কিন্তু পরীক্ষার কাঠামো এতটাই জটিল যে এটি তাদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”

একজন অভিবাসী, যিনি ১০ বছর ধরে ফ্রান্সে বসবাস করছেন এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন, তিনি FranceInfo-কে বলেন, “আমি প্রতিদিন ফরাসি ভাষায় কথা বলি, কিন্তু পরীক্ষার ধরন এত কঠিন যে আমি জানি না কীভাবে এতে পাস করব।”

নতুন আইন বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক

নতুন অভিবাসন আইনের বিষয়ে ফ্রান্সের পার্লামেন্টেও বিতর্ক চলছে। আইনটির পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানাঁ। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সরকার এটিকে একটি প্রয়োজনীয় সংস্কার হিসেবে দেখছে, যা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও সংহতির উন্নয়ন ঘটাবে।

তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি বাস্তবে অনেক অভিবাসীর নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ কঠিন করে তুলবে এবং ফ্রান্সে তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন ভেঙে দেবে।

নতুন আইনটি ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ কার্যকর হতে পারে বলে জানা গেছে, তবে এখনও এর সুনির্দিষ্ট বাস্তবায়ন তারিখ নির্ধারণ হয়নি।

Leave a Reply