You are currently viewing টিকিট না পাওয়ায় মালয়েশিয়া যাওয়া হলো না হাজার হাজার শ্রমিকের

টিকিট না পাওয়ায় মালয়েশিয়া যাওয়া হলো না হাজার হাজার শ্রমিকের

ভিসা ও সরকারের অনুমোদন সহ অন্যান্য প্রস্তুতি থাকা সত্তেও ফ্লাইটের টিকিট না পাওয়ায় মালয়েশিয়া যাওয়া হলো না ৩১ হাজার ৭০১ জন শ্রমিকের। কেননা মালয়েশিয়ার গত মার্চের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩১ মে এর পর আর কোনো নতুন বিদেশি শ্রমিক দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবে না। যার ফলে আজ শুক্রবার (৩১ মে) বন্ধ হচ্ছে দেশটির শ্রমবাজার। সেই সাথে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক।

কুষ্টিয়ার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন তিনি। এজেন্সি তাকে দফায় দফায় সময় দিয়েও ফ্লাইটের টিকেট দিতে পারেনি। বলছে, টিকেটের দাম বেশি হওয়ায় তারা কুলিয়ে উঠতে পারছে না। সর্বশেষ সন্ধ্যার একটি ফ্লাইটের টিকেট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই টিকেট তিনি এখনও হাতে পাননি।

মনিরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, দেশে কৃষিকাজ করে কষ্ট করে সংসার চালাতাম। সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে ঋণ করে ও জমি বন্ধক রেখে বিদেশে যাওয়ার উদ্যোগ নিই। বিদেশে যেতে না পারলে কীভাবে সংসার চালাব, ঋণ পরিশোধ করব?

শুধু মনিরুল নয়, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আজ হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছেন। তারা বলছেন, আজকের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া আর কোনো শ্রমিক নেবে না। আজকের মধ্যে যেতে না পারলে তারা আর মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন না। অনেক টাকা খরচ করেছেন, এখন বিদেশে যেতে না পারলে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, তারা তিন-চার দিন ধরে বিমানবন্দরে অবস্থান করছেন। কেউ নিয়োগকর্তার খোঁজ পাচ্ছেন, কেউ আবার পাচ্ছেন না।

জানা যায়, চক্র তৈরি করে কর্মী পাঠানোয় অনিয়মের ঘটনায় চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের জন্য আবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলে। তখন আবারও চক্র গঠন করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত মার্চে মালয়েশিয়া জানায়, দেশটি আপাতত আর শ্রমিক নেবে না। যাঁরা অনুমোদন পেয়েছেন, ভিসা পেয়েছেন, তাঁদের ৩১ মের (আজ শুক্রবার) মধ্যে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে হবে।

কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে (রিক্রুটিং এজেন্সি) টাকা দেওয়া বহু মানুষ এখন বিপদে পড়েছেন। সময় আর হাতে না থাকায় উড়োজাহাজের টিকিট ছাড়াই তারা এখন বিমানবন্দরে এসে ভিড় করেছেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, আজ বাংলাদেশ থেকে মাত্র এক হাজার ৫০০ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন। অর্থাৎ, ভিসা ও অনুমোদন পাওয়ার পরও ৩১ হাজার ৭০১ জন কর্মীর মালয়েশিয়া যেতে পারছেন না।
শ্রমিকেরা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় বাড়াতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, পাঁচ থেকে সাত লাখ করে টাকা তাঁরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়েছেন। এখন যেতে না পারলে বিপদে পড়বেন। কোম্পানিগুলো তাঁদের দেওয়া টাকা ফেরত দেবে কি না, সেই সংশয়ও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

বিমানবন্দর সূত্রে আরও জানা যায়, আজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সাতটি ফ্লাইট মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশের দুটি, ইউএস-বাংলার দুটি, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি, এয়ার এশিয়ার একটি এবং বাতিক এয়ারলাইন্সে একটি ফ্লাইট রয়েছে।
মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের ভিড় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, দুই দিন ধরে মালয়েশিয়াগামী অনেক যাত্রীর চাপ রয়েছে। বাড়তি এই চাপ সামলাতে নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

Leave a Reply